বাড়িআলোকিত টেকনাফটৈটং ইউপির সেই ১৫ টন চাল কেন বারবাকিয়ায়?

টৈটং ইউপির সেই ১৫ টন চাল কেন বারবাকিয়ায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক ||

কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষরে তোলা ৩০০ বস্তা চাল বারবাকিয়া ইউনিয়ন থেকে জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া হোসনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভবন থেকে চালের বস্তাগুলো জব্দ করা হয়। তবে জব্দকৃত চাল নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে ১৫ টন চাল তোলা হলেও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দাবি করছেন, ওই চাল স্কুলের। মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। মাঠ ভরাট প্রকল্পের পিসিও তিনি।

তবে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, ইউএনও তার কাছ থেকে একটি স্বাক্ষর নিয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছুই জানেন না।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা সাহাদত জানান, চাল জব্দের বিষয়ে তিনি অবগত নন। যদি চালগুলো সরকারি হয়ে থাকে, তাহলে সেই চাল তিনি ইউএনও হিসেবে নিয়ম মেনে বরাদ্দ দিয়েছেন কি-না সেটাই দেখার বিষয়।

পেকুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আজম জানান, জব্দকৃত চালভর্তি বস্তাগুলো পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছে। চালগুলোর কাগজপত্র দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যে স্কুল ভবন থেকে চালগুলো জব্দ হয়েছে সেই হোছনে আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা আলী জানান, রাত ১টার দিকে পেকুয়া থানা পুলিশ তাকে স্কুলে ডেকে নিয়ে স্কুলে রাখা ১৫ টন চাল তার জিম্মায় দেন। এর আগে রাত ৯টার দিকে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচি স্কুলের নাইট গার্ডের কাছ থেকে চাবি নিয়ে চালের বস্তাগুলো স্কুলের ভেতরে রাখেন।

স্কুলে চালের বস্তা রাখার বিষয়ে তিনি আগে কিছুই জানতেন না বলেও দাবি করে প্রধান শিক্ষক।

তিনি জানান, জিম্মানামায় বারবাকিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন মেম্বার ও স্থানীয় একজন যুবলীগ নেতাকে সাক্ষী করা হয়েছে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচি চালগুলো স্কুলের বলে দাবি করছেন। তার মতে, বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ১১৭ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই মাঠ ভরাট কাজের পিসি হচ্ছেন তিনি। জব্দকৃত চালগুলো ওই প্রকল্পের বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে ওয়াহিদুর রহমান ওয়ারেচির দাবি মতে, উদ্ধার করা চালগুলো স্কুলের হলে টৈটং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষরে তোলা চালগুলো কোথায় গেল সে প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণের মনে।

সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, টৈটং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে বরাদ্দ চাল কিভাবে বারবাকিয়ার একটি স্কুলে এলো, কিভাবেই বা দাবি করা হয়, ওই চাল বারবারিকা হোসনে আরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের!

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টা আমিও শুনেছি। তবে চালগুলো কিসের এবং কত কেজি সেটা এখনও নিশ্চিত নই। পেকুয়া-চকরিয়ার ত্রাণের বিষয়টি সমন্বয় করেন এডিসি (রাজস্ব)। ওনাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার সাংবাদিকদের বলেন, আমি পেকুয়ার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার থেকে রওয়ানা দিয়েছি। বিকেল নাগাদ বিষয়টির সর্বশেষ জানা যাবে বলে আশা করছি।

প্রসঙ্গত, ত্রাণের জন্য বরাদ্দ করা ১৫ টন চাল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকদিন ধরে আলোচনা সমালোচনা চলছে। ওই চেয়ারম্যানকে ‘চাল চোর’ বলেও অনেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অবশেষে টৈটং ইউনিয়নের সেই চাল বারবাকিয়া ইউনিয়ন থেকে উদ্ধার হলো।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments