বাড়িআলোকিত টেকনাফভাঙছে হিমছড়ি গড়ছে ইনানী

ভাঙছে হিমছড়ি গড়ছে ইনানী

আবদুল্লাহ আল আজিজ, উখিয়া (কক্সবাজার) | 

নদীর একূল ভাঙে, ওইকূল গড়ে, এইতো নদীর খেলা….। কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত উখিয়ার ইনানীতে জেগে উঠা বালুকাময় বিশাল চরের বাস্তব দৃশ্য দেখলে মরমী কণ্ঠ শিল্পী আব্দুল আলিমের গাওয়া এ গানটির কথা স্মরণ হয়। সম্প্রতি জেগে উঠা এ চরে বেড়ে উঠেছে অসংখ্য ঝাউবিথি। পর্যটকরা দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সেখানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ অবলোকন করতে দেখা যায়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন প্রাকৃতিক উপায়ে বেড়ে উঠা এ চর উখিয়ার পর্যটন শিল্পকে আরো আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশের দৃশ্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। যদি জেগে উঠা এ চরকে সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়।

সরেজমিন মাদারবনিয়া উপকুল থেকে হিমছড়ি ব্লক বীচ এলাকা ঘুরে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস ছালামের (৫৫) সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা স্বপরিবারে মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে যুগযুগ ধরে।

তিনি জানান, মেরিন ড্রাইভের অপর প্রান্তে তাদের বিশাল জমিজমা, বসতবাড়ি ও ক্ষেত খামার ছিল। ২০১০ সালের দিকে সাগরের করাল গ্রাসে তা বিলীন হয়ে যায়। সর্বশান্ত হয়ে আশ্রয় নেয় পাহাড়ের পাদদেশে। গত কয়েক বছর ধরে বিলীন হয়ে যাওয়া জমিজমা চর আকারে জেগে উঠছে।

ওই জমির মালিকানা দাবি করা যাবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, জেগে উঠা চর সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই তাদের জমি দাবি করার কোন যুক্তি নেই। তবে তিনি এও বলেন, তাদের প্রয়োজনীয় দলিলপত্র রয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন মেম্বার জানান, ২০১০-১১ সালের দিকে সাগর ছিল বর্তমান মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এলাকায়। বর্তমানে মাঝখানে রেজুখালের শাখা প্রশাখা বয়ে গেলেও ভাটার সময় তাও শুকিয়ে যায়। ফলে ইনানী চলে গেছে অনেক দুরে। আগে যেখানে পর্যটকরা সাগরের অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতো, তা এখন আর নেই। পর্যটকদের সাগরের লোনা জল নিয়ে খেলা করতে হলে মেরিন ড্রাইভ থেকে অন্তত ১ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে সাগরের দৃশ্য অবলোকন করতে হয়।

তিনি বলেন, ইনানীর বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে যে চর জেগে উঠেছে তা সংরক্ষণ করা না হলে ক্ষমতাধর রাঘববোয়ালদের করায়ত্বে চলে যেতে পারে। পাশাপাশি হিমছড়ি এলাকার ভাঙন রোধে সেনা সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেলেও প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মেরিন ড্রাইভের স্থায়িত্ব রক্ষা করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়েও ভাববার বিষয়।

কক্সবাজার তথ্য পরিবেশ মৎস্য উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কনসালটেন্ট বিশ্বজিৎ দাশ জানান, সাগরে নতুন ভূমি জেগে উঠা বা সংযুক্ত হওয়া ভুমি সম্প্রসারণের সহায়ক। চর জেগে উঠলে ভাঙনে বিপর্যস্ত সাগর সম্প্রসারণ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্লক বীচ থেকে মাদারবনিয়া পর্যন্ত যে চরটি জেগে উঠেছে তা সংরক্ষণ করা না হলে সমুদ্র এলাকা দুর্লভ ও দৃষ্টিনন্দন ইনানী সৈকতের প্রকৃতি ও ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্ণেল ফোরকান আহম্মদ বক্তব্যে বলেন, জেগে উঠা চর পর্যটনের উত্তোরণ হবে। তবে তা যথাসময়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

ইনানী বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ইনানী দিনদিন বড় হচ্ছে। তাই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব। তবে জেগে উঠা চরকে দৃষ্টিনন্দন করতে পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ইনানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ইউএনও বলেন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে ওই সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments